বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে প্রথমেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো


শিক্ষা সংবাদ প্রকাশের সময় : মার্চ ২১, ২০২০, ৪:৫৬ অপরাহ্ণ / ৩৪৮
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে প্রথমেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো
0Shares

বাংলাদেশের শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনেস্কোর হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালে আমাদের দেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০০০০-এর কাছাকাছি। আমাদের অনেকেরই ধারণা খুব মেধাবী এবং আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কেউ কেউ উপযুক্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে কীভাবে কি করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে প্রথমেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার উচিত স্বচ্ছ ধারণা রাখা।

যেসব প্রস্তুতি দরকার হবে :

১. ভাষা দক্ষতার প্রমাণ : উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে পড়তে যেতে ইংরেজি বা ঐ দেশের ভাষার দক্ষটা প্রমাণ দিতে হয়। আইইএলটিএস, পিটিই, টোফেল, স্যাট অথবা জিআরই, এগুলো ভাষা দক্ষটা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টেস্ট। উল্লেখিত টেস্ট ছাড়াও মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশান দিয়ে কোন কোন দেশে আবেদন করা যায়। তাই আপনি কোন দেশে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন তার ওপর নির্ভর করে ভাষা দক্ষতার টেস্ট নির্ধারণ করতে হয়।

২.পড়াশোনার প্রমাণ : বাংলাদেশে পড়াশোনার ফলাফলের ওপর বিদেশে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ব্যাপারটিও অনেক সময় নির্ভর করে। পৃথিবীর বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আপনার বিগত পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি নম্বর থাকা উচিত।

৩.আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ : কোন কোন দেশে আবেদন করতে শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক তার পড়াশোনাকালীন সবখরচ বহন করতে সক্ষম তা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে প্রমাণ দিতে হয়। তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে অভিভাবক বানিয়ে বা অর্থের বিনিময়ে ভুয়া স্পন্সর সংগ্রহ করে ভিসা আবেদন করা অনুচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন :

দেশ বাছাইয়ের পরে ঠিক করতে হবে যে, আমার সাবজেক্ট ও আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যেতে পারে। এক্ষেত্রেও একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বা চাহিদা, টিউশন ফির সঙ্গে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য থাকে। বিষয় নির্বাচনে সতর্কতাও জরুরি। কারণ, বিদেশে চাহিদা আছে এমন অনেক বিষয়ের চাহিদা আমাদের দেশে তেমন নেই। মানসম্মত শিক্ষাদান করে, তুলনামূলক টিউশন ফি কম এমন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করাই ভালো। শিল্পসমৃদ্ধ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে।

স্কলারশিপ :

বিভিন্ন দেশ বছরজুড়েই স্কলারশিপের ঘোষণা দেয়। ফুল-ফান্ড স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় টিউশন ফি, শিক্ষা উপকরণ, লাইব্রেরি ফি, বাসস্থান, যাতায়াত, মেডিক্যাল খরচও বহন করছে কর্তৃপক্ষ। যা উচ্চ শিক্ষায় দেশের বাইরে পড়তে যেতে কঠিন একটি বাধা দূর করে দেয়। আর সেটি যদি আংশিক স্কলারশিপ হয়, এক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে স্কলারশিপের মেয়াদ কত, সেটি নবায়ন করা যাবে কি না। বিদেশে বিনা খরচায় পড়াশোনা করতে চাইলে আপনাকে এমন কিছু দেশে আবেদন করতে হবে, যে দেশগুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই। জার্মানি, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ কিছু দেশের অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি গুনতে হয় না।

কী কী কাগজপত্র লাগবে :

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে গেলে কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন পড়বে তা নির্ভর করে আবেদনকারীর সার্বিক অবস্থার ওপর। যেসব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হয় সেগুলো হলো—শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও নম্বরপত্র, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি বা স্পন্সর-সংক্রান্ত কাগজপত্র, ভাষা দক্ষতা সনদ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি ইত্যাদি। কিছু কিছু ডকুমেন্টস নোটারি করা লাগতে পারে।

সাবধানতা :

আন্তর্জাতিক যোগ্যতাসম্পন্ন এডুকেশন কন্সালটেন্ট (PIER-QEAC সার্টিফাইড)-এর সাহায্য নিতে পারেন, এতে আপনার ভিসার সিদ্ধান্ত পেতে অনেক কম সময় লাগবে। আর মনে রাখবেন, একবার ভিসা পেতে ব্যর্থ হলে, পরবর্তীতে অফার লেটার/ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। কোনো চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হবেন না। ভিসা পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকলে অর্থের বিনিময়ে কেউ আপনাকে ভিসা পাইয়ে দিতে পারবে না।

0Shares