১৯৬১-৬২ সালের দুই অধ্যাদেশ বাতিল করে শিক্ষা বোর্ড আইন চূড়ান্ত


Shikkha Songbad প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৬, ২০২৩, ১:১০ অপরাহ্ণ /
১৯৬১-৬২ সালের দুই অধ্যাদেশ বাতিল করে শিক্ষা বোর্ড আইন চূড়ান্ত
0Shares

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পুনর্বিন্যস্ত বা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর জন্য একটি সমন্বিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২৩ নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো খসড়ার সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পুনঃসংগঠন, পরিচালন, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘দ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১’ ও ‘দ্য রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুলস অর্ডিন্যান্স, ১৯৬২’ বাতিল ও যুগোপযোগী করে নূতনভাবে আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে আইন প্রণীত হওয়ায় চার দশক আগের যে দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে বোর্ডগুলো পরিচালিত হতো তার অবসান হবে।

বোর্ড প্রতিষ্ঠা: এই আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ‘দ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১’ অনুযায়ী স্থাপিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসমূহ এমনভাবে বহাল থাকবে যেন এই আইনবলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

বোর্ড একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে এবং স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করার, অধিকারে রাখার এবং হস্তান্তর করার ক্ষমতা থাকবে এবং স্বীয় নামে মামলা দায়ের করতে পারবে এবং বোর্ডের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।

সরকার এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিদেশি শিক্ষাক্রমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এক অথবা একাধিক নতুন বোর্ড স্থাপন করতে ও বোর্ডের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারবে।

বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ: বোর্ডের সাধারণ প্রশাসনসহ সার্বিক কার্যক্রম চেয়ারম্যান কর্তৃক পরিচালিত হবে, যা পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, তিনি পর্ষদের সভাপতিও হবেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর অথবা বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন চেয়ারম্যান; সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন এলাকায় অবস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক যিনি সরকার মনোনীত; মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনোনীত একজন পরিচালক বা অধ্যাপক পদমর্যাদার কর্মকর্তা; সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন এলাকায় অবস্থিত স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর কলেজসমূহের অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একজন অধ্যক্ষ; সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন এলাকায় অবস্থিত সহশিক্ষা চালু রয়েছে এরূপ কলেজ বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের অধ্যক্ষগণের মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একজন অধ্যক্ষ; সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন এলাকায় অবস্থিত বিদেশি শিক্ষাক্রমে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধানগণের মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একজন অধ্যক্ষ; বোর্ড যে জেলায় অবস্থিত সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি); সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন এলাকায় অবস্থিত মাধ্যমিক (বালক) বিদ্যালয়সমূহের প্রধান শিক্ষকগণের মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একজন প্রধান শিক্ষক; সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অধীন এলাকায় অবস্থিত মাধ্যমিক (বালিকা) বিদ্যালয়সমূহের প্রধান শিক্ষকগণের মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একজন প্রধান শিক্ষক; সরকার কর্তৃক মনোনীত দুইজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি; সংশ্লিষ্ট বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক, যিনি পর্ষদের সদস্য-সচিব হবেন।

বোর্ডের বিষয়াবলিতে আর্থিক স্বার্থ রয়েছে এরূপ ব্যক্তিদের বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ অথবা কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি যার বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত কোনো পরীক্ষার জন্য শিক্ষাকোর্স হিসাবে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পুস্তকে আর্থিক স্বার্থ রয়েছে অথবা এই জাতীয় কোনো পুস্তক প্রকাশ, সংগ্রহ অথবা সরবরাহ করে এরূপ কোনো ফার্মে অংশীদার অথবা অন্য কোনো উপায়ে আর্থিক স্বার্থ রয়েছে তিনি বোর্ডের সদস্য অথবা কোনো কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন না এবং এই জাতীয় কোনো স্বার্থ অর্জনের পর তিনি আর সদস্য থাকবেন না।

বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মেয়াদ: এই আইনের বিধানসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক ব্যতীত বোর্ডের মনোনীত অথবা নিয়োগকৃত সদস্য নিয়োগের তারিখ থেকে তিন বছর মেয়াদের জন্য স্বীয় পদে আসীন থাকবেন।

চেয়ারম্যানের নিয়োগ ও দায়িত্ব: সরকারি কলেজের অধ্যাপক পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, তিনি বোর্ডের একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হবেন এবং সরকার যেসকল শর্ত স্থির করবে সেই শর্তে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।

ছুটি, অসুস্থতা অথবা অন্য কোনো কারণে যখন সাময়িক অথবা অন্যভাবে চেয়ারম্যানের পদশূন্য হয়, তখন চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অন্তবর্তীকালীন জন্য বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক অথবা বোর্ডে কর্মরত জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

চেয়ারম্যান এই আইন ও প্রবিধানসমূহের বিধানসমূহ বিশ্বস্ততার সাথে প্রতিপালন, মনিটরিং এবং তিনি এই উদ্দেশ্যে সকল দায়িত্ব পালন করবেন।

চেয়ারম্যান বোর্ডের মুখ্য নির্বাহী এবং অ্যাকাডেমিক কর্মকর্তা হবেন এবং বোর্ড পরিচালনা পর্ষদসহ সকল কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

বোর্ডের প্রশাসনিক কাজে সৃষ্ট কোনো জরুরি অবস্থা এবং যার কারণে চেয়ারম্যানের মতানুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক হয়, তিনি যেরূপ প্রয়োজন বিবেচনা করবেন সেরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং গৃহীত ব্যবস্থা অনুমোদনের জন্য বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন।

বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ: বোর্ডের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সরকার, নির্বাহী পরিচালক ও তফসিলে উল্লিখিত পদসমূহে তৎকর্তৃক নির্ধারিত শর্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে। বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শৃঙ্খলা, পদমর্যাদা, পদোন্নতি, চাকরির শর্ত ও নিয়মাবলি, ছুটি বিধিমালা এবং অবসর বিধিমালাসমূহ প্রবিধানমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। বোর্ডের একজন স্থায়ী কর্মচারী যেদিন তাঁর বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হবে সেদিন তিনি অবসর গ্রহণ করবেন। অবসরভাতা, পেনশন ও ভবিষ্যতহবিল প্রবিধানে বর্ণিত শর্তাবলি সাপেক্ষে প্রযোজ্য হবে। কোনো কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী চাকরিকালীন মারা গেলে অথবা দুর্ঘটনা অথবা অসুস্থতার কারণে অক্ষম হলে, তাঁর পরিবার বোর্ডের অধীন চাকরিকালীন প্রতিবৎসরের জন্য একমাসের মূলবেতনের সমপরিমাণ একটি আনুতোষিক প্রাপ্ত হবেন।

বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তবোর্ড বদলি: সরকার, বোর্ডে কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনবোধে জনস্বার্থে আন্তঃবোর্ড বদলি করতে পারবে।

পরীক্ষা স্থগিত:  যদি অতিমারি, মহামারি, দৈবদুর্বিপাকের কারণে বা সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে ঘোষিত কোনো অনিবার্য পরিস্থিতিতে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হলে সরকারের অনুমোদনক্রমে বোর্ড কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা, কোনো বিশেষ বছরের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা গ্রহণ ব্যতীত বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করিয়া উক্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ এবং সনদ প্রদানের জন্য নির্দেশাবলি জারি করতে পারবে।

সাময়িক নিবন্ধন: বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে উক্ত বিদ্যালয় স্থাপনকারী বা পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সাময়িক নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কাগজপত্র ও তথ্যাদি পরীক্ষান্তে এই আইনের সাথে সংগতিপূর্ণ শর্তাবলি পালন করিতে সক্ষম বেসরকারি বিদ্যালয়কে নির্ধারিত ফর্মে সাময়িক নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে।

নিবন্ধন: প্রত্যেক বেসরকারি বিদ্যালয়, সাময়িক নিবন্ধনের মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার অন্যূন ৩০ কার্যদিবস পূর্বে উক্ত বিদ্যালয় স্থাপনকারী বা পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে উক্ত বিদ্যালয় নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফিসহ নির্ধারিত ফর্মে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রাপ্তির পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ, যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয়, তাহলে উক্ত বিদ্যালয়কে নিবন্ধন সনদ প্রদান করবে। এই আইনের অধীন প্রাপ্ত নিবন্ধনের মেয়াদ হবে সনদ প্রদানের তারিখ হতে তিন বছর।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই কাঠামোতে পরিচালনার উদ্দেশ্যে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত হবে।

দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী: বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ ও এই আইনের অধীনে গঠিত প্রত্যেকটি কমিটির প্রত্যেক সদস্য এবং এই আইনের উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়োগকৃত প্রত্যেক ব্যক্তি ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দণ্ডবিধির ২১নং ধারা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে গণ্য হবেন।

বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের চুক্তি সম্পর্কিত বিধিনিষেধ: বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য বোর্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে অথবা কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে বোর্ডের কোনো বিষয়ে কোনোরূপ চুক্তি করতে পারবেন না। ।

0Shares