মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ভুলে প্রথম দফায় তালিকা থেকে বাদ পড়লেন যোগ্য শিক্ষকেরা, যারা এখন খেসারত দিচ্ছেন। ‘অনিশ্চয়তা’ ও ‘অপেক্ষা’ দুটোই তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের। অধিদপ্তর ভুল বা সময়ক্ষেপণ না করলে এত দিনে তারাও এমপিওভুক্ত হতেন। বেতন-ভাতা পেতেন।
এরা ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষক। একসঙ্গে যাদের নাম তালিকাভুক্ত করার নির্দেশনা ছিল, তাদের একটি অংশ এখন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, বাকিরা অনিশ্চয়তায়।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কলেজ) বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষকদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবিউল ইসলাম বলেন, এসব শিক্ষকের যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র রয়েছে, অচিরেই এসব শিক্ষক সুসংবাদ পাবেন। এই কর্মকর্তা বলেন, এসব শিক্ষক মন্ত্রণালয়ে এসেও নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিষয়ে সমন্বয় না থাকায় বিষয়টি এমন হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি স্তরটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, ডিগ্রি স্তরে প্রতিটি ঐচ্ছিক বিষয়ে অনুমোদন পেতে হলে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দুজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। ফলে তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হন না।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ডিগ্রি স্তরের ১৫৩ তৃতীয় শিক্ষককে (২০১০ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া) এমপিওভুক্ত করা হয়। তবে ঐ সময়ের পর বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ৮৫০ জন তৃতীয় শিক্ষক এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এর মধ্যে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ৭৭০ জনের তালিকা প্রকাশ করে মাউশি, যাতে নানা ভুল ও অসংগতি রয়েছে। এখন বাদ পড়াদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা তৈরিতে মাসের পর মাস সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।
মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেতে বেশি দেরি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরই মাঠ পর্যায়ে চিঠি দিয়ে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাদ পড়া শিক্ষকদের অভিযোগ, ‘এক্ষেত্রে শিক্ষা বিভাগ খুবই ধীরগতিতে কাজ করছে। প্রথমবার ভুল হয়েছে তাদের কারণেই। এর ফলে আমরা এখন ভোগান্তিতে রয়েছি। মাউশি যে গতিতে কাজ করছে, তাতে আমাদের এমপিওভুক্তিতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’
আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘বিধি মোতাবেক নিয়োগ পেয়েছি এবং যোগ্য শিক্ষক হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নাম মাউশিতে পাঠানো হয়েছে। এর প্রমাণও রয়েছে। যে মেইল থেকে এই তালিকা মাউশিকে পাঠানো হয়েছে, তার প্রমাণও রয়েছে। অথচ মাউশির ভুলে তালিকা থেকে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আমি এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছি। মাউশির উদাসীনতায় এমনটি হয়েছে।’ তার প্রশ্ন, ‘এর দায় কেন আমাদের নিতে হবে?’ অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষক বলেন, ‘আর অপেক্ষা সহ্য করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছি, কোনো খবর আছে কি না। কিন্তু কোনো খবর মিলছে না। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও আপডেট কোনো খবর পাচ্ছি না।’
আপনার মতামত লিখুন :