দীর্ঘ এক যুগ পর ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে ৭১০ কলেজ শিক্ষকের। তারা বিভিন্ন কলেজে ‘তৃতীয় শিক্ষক’ হিসেবে পরিচিত। এসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে চলতি সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মৌখিক অনুমতি মিলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের মধ্যে তাদের এমপিওভুক্ত করার কাজ শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী ডিগ্রিস্তরে একটি বিষয় পড়ানোর জন্য একটি কলেজে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী কলেজে দুজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত করা যায়। ফলে ৩ জনকে নিয়োগ দিলেও একজন এমপিওভুক্তির বাইরে থেকে যান। কলেজগুলোতে ওই শিক্ষককে ‘তৃতীয় শিক্ষক’ বলা হয়। এমপিওভুক্ত হতে তৃতীয় শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে গেলে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। এর পর থেকে এসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা শুরু হয়। প্রথম ধাপে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ডিগ্রি স্তরের ১৫৩ জন তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
২০১০ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক রয়েছেন যারা এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এসব শিক্ষক অর্থ বিভাগ কর্তৃক জনবল কাঠামোভুক্ত নয়। যে কারণে তৃতীয় শিক্ষকদের যোগ্যতা, বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত থাকা সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করতে সম্মতির জন্য অনুরোধ জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে ৯ শর্তে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য মাউশিকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ২০১৮ সালে ডিগ্রি স্তরের ১৫৩ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এবার ৭১০ শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষ পর্যায়ে। আশা করি চলতি সপ্তাহে তাদের নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারব।
মাউশি সূত্র জানায়, মাউশির ৯টি অঞ্চল থেকে ৭৬৮ জন শিক্ষকের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নতুন করে এমপিওভুক্ত ৫২টি কলেজের শিক্ষকরা রয়েছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রিস্তরের জন্য কাম্য শিক্ষার্থী আছে কি না তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর এমপিওভুক্ত করা হবে।
মাউশির উপ-পরিচালক (কলেজ-২) মো.হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে— এটা সুখবর। আমরা দেশের ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা পেয়েছি। তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। শুধু ঢাকা অঞ্চলের তালিকায় কিছু অনার্সের শিক্ষকের নাম রয়েছে। আশা করছি এ সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো যাবে।
প্রসঙ্গত, ‘বাংলাদেশ ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক পরিষদে’র সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক রুমানা পারভীন ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে ৭১০ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে মাউশিকে চিঠি দিয়ে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়।
মাউশির মতামতে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের জনবলকাঠামো-২০১০ প্রকাশের পর বিধি মোতাবেক সারা দেশে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে সরকারের বার্ষিক ২৫ কোটি এক লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় হবে।
যেসব শর্তে মিলবে এমপিওভুক্তি :
তৃতীয় শিক্ষকরা নয়টি শর্তে এমপিওভুক্ত হবেন। শর্তগুলো হলো— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ডিগ্রিস্তর এমপিওভুক্ত থাকতে হবে; নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকের নিয়োগকালীন কাম্য যোগ্যতা এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত থাকতে হবে। নিয়োগ করা হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানে নতুনভাবে কোনো তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। নিয়োগের সময় থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ও ধারাবাহিকভাবে কর্মরত থাকতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাগজপত্রে স্নাতক (পাস) স্তরে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রমাণ থাকতে হবে। অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের কোনো শিক্ষককে যুক্ত করা যাবে না। নিয়োগের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সদ্য সরকারিকৃত কোনো কলেজের শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হবে না।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ অধিভুক্ত থাকতে হবে; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর সনদ থাকতে হবে। উল্লিখিত শর্ত পূরণ না করে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষকের নামের তালিকা পাঠালে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে শিক্ষকদের নামের তালিকা যাচাই করে নিজস্ব দপ্তরে জেলাভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে মাউশিতে পাঠাতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, নির্দেশনা মেনে মাঠ পর্যায় থেকে মাউশিতে তালিকা পাঠাতে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। কিছু শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হলেও বাদ পড়েন বিপুল সংখ্যক।
আপনার মতামত লিখুন :