ইউজিসি’র নির্দেশনা মেনে ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পাঠদান চালু


শিক্ষা সংবাদ প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৭, ২০২০, ৬:৫৪ অপরাহ্ণ / ৩৬৪
ইউজিসি’র নির্দেশনা মেনে ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পাঠদান চালু
0Shares

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো দেশ লকডাউন অবস্থায়। দফায় দফায় বাড়ছে সরকারি ছুটি। অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এমতাবস্থায় শিক্ষাকার্যক্রম যাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই আশঙ্কা থেকে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকের ‘ঘরে বসে শিখি’ ও মাধ্যমিকের ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ প্রোগ্রামের আওতায় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস দেশব্যাপী সব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার প্রজ্ঞাপন জারি করে।

ইউজিসি’র নির্দেশনা মেনে দেশের ৬৫টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম চালু করেছে। সারাদেশে বর্তমানে মোট ১৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান। অর্থাৎ ৭৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় না গিয়ে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছে।

ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে দুই দফায় নির্দেশনা দেয়া হয়। কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ওই নির্দেশনা মেনে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু করে।

অনলাইন পাঠদান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন, কবে থেকে শুরু করা হয়েছে, কতজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চাওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে ইউজিসি থেকে দু’দফায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিঠি দেয়া হয়।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য চাইলে সম্প্রতি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দু’দফা চিঠি দিলেও প্রথম দফায় ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৩২টি বেসরকারি ও ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

এরপর তিনদিনের সময় দিয়ে আবারও এ বিষয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ই-মেইল করা হয়। গত বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ দু’দফায় ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ইউজিসির কাছে পৌঁছেছে।

সারাদেশে ৯৫টি বেসরকারি ও ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে মোট ১৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান থাকলেও ৬৫টিতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি ৭৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

গত মাসের শেষের দিকে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া কমিশনের এক চিঠিতে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহবান জানানো হয়। পরে কমিশন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্ক (বিডিরেন)-এর ডেটা সেন্টারের জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনা খরচে অনলাইন কার্যক্রম চালানো সম্ভব।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তা মোকাবিলার লক্ষ্যে শিক্ষকদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিডিরেনের ডাটা সেন্টার ব্যবহার করে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই শুধুমাত্র ডেক্সটপ কম্পিউটার/ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোন এ তিনটির যে কোনো একটি এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষের মতো পাঠদান ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ই-মেইলের মাধ্যমে বিডিরেনের সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে। ই-মেইলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মোবাইল নম্বরসহ বিস্তারিত পরিচয় দিতে হবে এবং ই-মেইলের কপিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে রাখতে হবে। বিডিরেন হতে ই-মেইলটির সত্যতা যাচাই করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে বিষয়টি অবহিত করা হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্যে বিডিরেনের সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিয়মান হচ্ছে। এছাড়া দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

0Shares