করোনা বর্তমান সময়ে একটি আতংকের নাম। পৃথিবীর সব শক্তি যেন আজ পরাজিত। যতটুকু চেষ্টা করার সামর্থ্য আছে সেটাও আপনাকে ঘরে থেকেই করতে হবে। শক্তি বা সাহস দেখিয়ে বাইরে আসা মানেই খাল কেটে কুমির আনা নয় বরং কুমিরের খালে লাফ দেয়া। পুরো পৃথিবী আজ কোনঠাসা হয়ে পরেছে। শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়। জীবনের সব আশা আজ হতাশায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন থমকে আছে।
আবার কেউ তার স্বপ্ন পূরণ করেলেও উপভোগ করতে পারছে না স্বপ্ন পূরণের মুহুর্ত গুলো। এরপরও অনেক শিক্ষার্থী নিজের সবকিছুই ভুলে এগিয়ে এসেছে মানবতার সেবাই।গ্রামে গঞ্জে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি। গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে প্রত্যকের সামর্থ অনুযায়ী।যা সবার চোখে পড়ার মতো।
পৃথিবীর ইতিহাসে করোনার মতো এই পরিস্থিতি কখনো কেউ পর্যবেক্ষন করেনি। তবে কিছু কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেই আজ পর্যন্ত এসেছে। কোন কিছুই স্থায়ী নয়। একদিন সবকিছুই ঠিক হবে কিন্তু শিক্ষা নির্ভর এই জাতি কতটুকু টিকে থাকবে সেটাই আসল বিষয়।
শিক্ষা হচ্ছে একটা জাতির মেরুদণ্ড।
মেরুদণ্ড ছাড়া কোন কিছুই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনা।আমরা যদি পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই তাদের উন্নতির মুলে রয়েছে শিক্ষা। আমার অনুন্যত দেশ সমুহের দিকে লক্ষ্য করে দেখতে পাই তাদের অনুন্নতির কারণ শিক্ষা। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত।
করোনাময় এই পরিস্থিতিতে স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করলেও আশারমুখ দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু
দীর্ঘ বিরতির এই সময়ে শিক্ষার্থীদের অলস সময় কাটানোর সুযোগ নেই। কেননা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদেরকেই থেমে যাওয়া এই দেশ ও জাতিকে গতিময় করতে হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। আর আমরা শিক্ষার্থীরা কি সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি? নাকি নিজেকে ছাত্রদের পরিচয় দিয়ে ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি ঠিক যেন ঘড়িতে লেগে থাকা চার্জহীন ব্যাটারীর মতো। মনে রাখতে হবে ঘড়ি থেমে থাকলেও সময়টা কিন্তু থেমে নেই। সুতরাং আপনি যদি পরবর্তীতে এই দেশ ও জাতির হাল ধরতে না পারেন তাহলে এ ব্যার্থতা আপনার।
সংকটময় এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা নিজেকে এগিয়ে রাখতে কিছু কাজ বা পরামর্শ অবশ্যই পালনীয়।
যেমন:-
১.রুটিন:
প্রতিটি শিক্ষার্থীর একটা রুটিন থাকবে।এই রুটিন অনুযায়ী সে প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করবে। রুটিন হলো আকাশের ঐ ধ্রুব তারার মতো যা দেখে একজন নাবিক সমুদ্র যাত্রা করে।
২.একাডেমিক পূর্ব প্রস্তুতি:
বর্তমান সময়টা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তখন এসএসসি/দাখিল/সমমান শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। এইচএসসি/আলিম শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নেওয়ার পরও পরিক্ষার সময় এখন অনিশ্চিত। আর এইচএসসি পরিক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তো আরো অনিশ্চিত। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সেশনজট তো থাকছেই যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বা কিছু ডিপার্টমেন্টে সেশনজট ছিল না বললেই চলে।
সুতরাং এসএসসি/দাখিল/সমমান শিক্ষার্থীরা রেজাল্টের অপেক্ষা না করে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা করতে হবে। এইচএসসি/আলিম শিক্ষার্থীরা তাদের পরিক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাবে পরিক্ষারপূর্ব পর্যন্ত। তবে এর পাশাপাশি এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ বা ধারণা নিয়ে রাখতে পারে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে রাখবে। সেটা হতে পারে চাকরির পড়াশোনা বা উদ্যক্তা হওয়ার কোন নতুন ধারনা তৈরি।
৩.অন্যান্য পড়াশোনা:
একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যারা অন্যান্য পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী কিন্তু বাসায় নতুন কোন বই না থাকায় সময় নষ্ট করেছে। তারা ল্যাপ্টপ বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে “প্লে স্টর ” সফটওয়্যার থেকে নিজের পছন্দের বই ডাউনলোড করে পড়তে পারবে। এছাড়াও গুগলে সার্চ করে নিজের ইচ্ছে মত পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে পড়তে পারে। আর ইউটিউবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা তো সবসময় প্রস্তুত আছেই।
৪.অনলাইনে পড়াশোনা:
বর্তমান সময়ে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই। শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান সময় ফেসবুক সহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে তথা অনলাইনে কাটিয়ে দেয়। এই সময়টা তারা চাইলেই কাজে লাগাতে পারে। শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজ যেমন “টেন মিনিট স্কুল” এর সাথে যুক্ত হয়ে যে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। এবং অন্যদের আলোচনা পড়েও নিজে কিছু অর্জন করতে পারে। অনলাইন ভিত্তিক প্রতিযোগিতা বা বিভিন্ন অলিম্পিয়াড এ অংশগ্রহন করতে পারে।
৫.সময় সঞ্চয়:
প্রবাদ আছে “সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না”। কিন্তু কেউ চাইলে নিজের জন্য সময় সন্চয় করতে পারে। আমরা আমাদের খারাপ লাগা সময়গুলোতে নাটক বা সিনেমা দেখে কাটিয়ে দেই। আবার কেউ বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করি। অথবা আজকের সব কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হয়েছে বলে আড্ডা অন্যভাবে বাকি সময়গুলো কাটিয়ে দেই।এটা না করে যদি আগামীকালের কিছু কাজ আজকেই শেষ করি তাহলে দেখা যাবে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার শেষের কয়েকটা দিন আর আর কোন কাজ নেই।ঐদিনগুলোতে অন্য কাজ করা যাবে। এভাবে আমরা আমাদের সময় সঞ্চয় করতে পারি।
৬.স্বাস্থ্যসম্মত খাবার:
খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহের পুষ্টি সাধিত হয় ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই সুস্থ জীবনের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। সবসময় বাসায় থাকার কারণে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ বা যা ইচ্ছা তাই খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অতিরিক্ত কিছু খাওয়ার ফলে পেটে সমস্যা হতে পারে।তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী।
৭.নিয়মিত শরীর চর্চা:
সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চার বিকল্প নেই।শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এ সকল রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির আনে।এর ফলে সমস্ত শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়, কাজে-কর্মে ও লেখাপড়ায় মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়াম অনিদ্রা দূর করে, অতি নিদ্রা হ্রাস করে। নিয়মিত যিনি শরীরচর্চা করেন তার ঘুম আসার কোনো সমস্যা হয় না, গভীর ঘুম হয়।
৮.পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:
করোনা ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবানুমুক্ত থাকা। কেননা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সতর্কতাই সংক্রামক ব্যাধি করোনাসহ সব ধরনের জীবানুবাহী রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে।করোনা প্রতিরোধে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যেমন জরুরি তেমনি এটি ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদতও বটে।
৯.ধর্মীয় ইবাদত:
ধর্মীয় ইবাদত মৌলিক কাজগুলো মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। আর বর্তমান সময়ে প্রতিটি ধর্মের মানুষ তাদের সৃষ্টি কর্তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। করোনাময় এই পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আর কোন উপায় নেই। একমাত্র তিনিই পারেন আমাদের রক্ষা করতে। সুতরাং প্রত্যেকের উচিত বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং এহেন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা।
১০.নিজেকে প্রস্তুত রাখা:
সর্বপরি প্রত্যেকের উচিত নিজেকে প্রস্তুত রাখা। যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার মানুষিকতা তৈরি করা, আত্মবিশ্বাসী হওয়ার এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
লেখক,
মোন্নাফ হোসাইন নিরব।
শিক্ষার্থী,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার মতামত লিখুন :