ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অনলাইনে ক্লাস সচল রেখেছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়


শিক্ষা সংবাদ প্রকাশের সময় : মে ৭, ২০২০, ১:৪৮ অপরাহ্ণ / ৫৬৬
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অনলাইনে ক্লাস সচল রেখেছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়
0Shares

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দেশব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে থাকলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিডিইউ) অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার মাধ্যমে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যেখানে দেশ সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনলাইন ক্লাস চালু করতে পারছে না সেখানে দীর্ঘ এক মাসের উপরে সপ্তাহে ৪ টি প্রোগ্রামে ৬ দিন বেলা ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস করছেন বিডিইউ’র ২০০ শিক্ষার্থী।

শুধু তাই নয়, অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ এবং সম্ভাবনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিডিইউ প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের প্রথম ইনস্টিটিউট ফর অনলাইন এন্ড ডিজিটাল লার্নিংও। যা দেশে অনলাইন শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক। অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে বিডিইউ সম্প্রতি সোয়াট এনালাইসিস নামে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যেটি মান নির্ধারণ এবং মান উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত একটি মাধ্যম, জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এ পর্যালোচনা সমীক্ষার আওতায় শিক্ষক এবং ছাত্রদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার অনলাইন শিক্ষার শক্তিশালী ও দুর্বল দিক, সুযোগ এবং ঝুঁকি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে।

এতে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষক এবং ছাত্র মনে করে তাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে কার্যকর অনলাইন শিক্ষা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক সহযোগিতা। সমীক্ষায় যেমনটি বলা হয়েছে, সঠিক কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের যথাযথ নির্দেশনা এবং উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক খুবই আন্তরিক এবং সহায়ক হওয়াও চাই।

সমীক্ষায় দেখা যায়, শিক্ষকরা যদি প্রশিক্ষিত থাকেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষায় খরচ কম হয়। অনলাইনে শিক্ষা দেওয়া এবং গ্রহণে শিক্ষক এবং ছাত্রদের ব্যাপক আগ্রহ এবং উদ্দীপনা বিডিইউর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সফলতার অন্যতম কারণ। সেইসঙ্গে অনলাইন শিক্ষা দেওয়ায় যে প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার প্রয়োজন, তা ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রশংসিত হয়েছে, যেহেতু তাদের ৯০ শতাংশই নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছেন এবং গ্রুপ ওয়ার্ক, প্রেজেন্টেশন এবং অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার মতো কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন।

অনলাইন শিক্ষার সুবিধা তুলে ধরে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা যেকোনো জায়গা থেকে তাদের গ্যাজেটগুলো ব্যবহার করে ক্লাসে যোগ দিতে পারেন। তার মানে তারা যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় শিখতে পারেন। এমনকি যদি কেউ ক্লাসে যোগ দিতে না পারেন তবুও সে কোর্স শিক্ষকের দেওয়া লেকচার রেকর্ড এবং শিক্ষার অন্যান্য উপকরণ থেকে শিখে নিতে পারেন। যা মুখোমুখি ক্লাসে সম্ভব নয়। এছাড়াও অনলাইন ক্লাস পরিচালনা কম ব্যয়বহুল। প্রযুক্তিগত এবং অবকাঠামোগত সম্পদও অনলাইন ক্লাস পরিচালনায় বিডিইউ’র সাফল্যের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই এটি জি-স্যুট অ্যাকাউন্ট এবং তার ওপর প্রশিক্ষণের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি সব শিক্ষার্থী এবং অনুষদের জন্য কাস্টমাইজড এবং সুসংগঠিত লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভার্চুয়াল মেশিন (ভিএম) দিয়ে সজ্জিত। শিক্ষার্থীরা যেকোনো জায়গা থেকে তাদের ভিএম অ্যাক্সেস করতে পারেন। ক্যাম্পাস থেকে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করার জন্য বিডিইউ’র অন্যতম সেরা হাতিয়ার স্মার্ট বোর্ড এবং সব ছাত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল সরবরাহ করা হয়েছে।পর্যালোচনা সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অনলাইন শিক্ষার কিছু দুর্বল দিকও ফুটে উঠেছে। যার মধ্যে রয়েছে ফুল টাইম সিনিয়র শিক্ষক বা অধ্যাপক, অপর্যাপ্ত লার্নিং ডিজাইনার এবং লার্নিং টেকনোলজিস্টের অভাব।

এছাড়া ভার্চুয়াল মেশিনের প্রায়শই সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং ওয়েবক্যাম সুবিধার অভাব, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পোর্টেবল ডিভাইসের অভাব (ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি), রিয়েল-টাইম পরিবেশের অভাব, কার্যকর সফটওয়্যারের অভাব, ছোট ও ভাড়া নেওয়া ক্যাম্পাস এবং অপ্রতুল গ্রন্থাগারের সুবিধার মতো বিষয়গুলোতেও শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার অভাবকেও দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এছাড়াও উচ্চ ইন্টারনেট ব্যয়, ইন্টারনেটের কম গতি এবং ঘন ঘন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতার মতো কিছু বাহ্যিক দুর্বলতাও অনলাইন শিক্ষা বাধাগ্রস্ত করছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি এবং বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছু শিক্ষার্থী মুখোমুখি ক্লাস ভালো বলে মনে করে। তাই শিক্ষার্থীর মানসিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও অনলাইন শিক্ষার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যালোচনায় অনলাইন শিক্ষার অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ উল্লেখ করে বলা হয়, অনলাইন ডিগ্রি বা কোর্স চালু করা, যেখানে বিডিইউ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেতে পারে।

এক্ষেত্রে সরকার এবং ইউজিসির নানামুখী সমর্থন এবং সহযোগিতা আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা, ল্যাব এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সমৃদ্ধ করা, অনলাইন ক্লাস বা দূরবর্তী শিক্ষন (বিনামূল্যে) পরিচালনায় সহায়তা। পাশাপাশি বিডিইউ অনলাইন শিক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কেও সহায়তা করতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে গতানুগতিক মানসিকতাকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনও অনলাইন ক্লাস, কোর্স এবং সনদকে যাথাযথ গুরুত্ব দেয় না। তাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের মানসিকতা পরিবর্তন করা বিডিইউ’র জন্য বড় একটি চ্যালেজ্ঞ।

বিডিইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দীর্ঘ এই বন্ধে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারে। তাই অনলাইন ক্লাস তাদের যথাসময়ে কোর্স সম্পূর্ণ করতে এবং সঠিক পথে রাখতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া এর ফলে তাদের সেশনজটে সময়ও হারাতে হবে না।

তিনি বলেন, যেহেতু বিডিইউ’র ক্লাসগুলো নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়, তাই আমরা সময় মতো আমাদের সেমিস্টার শেষ করতে পারি। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই মহামারি চলাকালীন সময়কে কাজে লাগিয়ে সঠিক পথে আছে।

ড. মুনাজ বলেন, সামগ্রিকভাবে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার মাধ্যমে আমরা, অনুষদ সদস্যরা বর্তমান প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিখেছি। কিছু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অনলাইন ক্লাস সত্যিই অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যারা আর্থিক অবস্থার কারণে বা সীমিত পরিমাণ আসনের কারণে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বা ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন না, তারা এ সুযোগ নিতে পারেন। আমাদের সীমিত আসন থাকলেও আমরা ভবিষ্যতে তাদের মতো আরও শিক্ষার্থীদের জড়িত করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, অনলাইন এবং ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে যেকোনো অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে এবং উচ্চশিক্ষা খাতকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের আরও প্রস্তুত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিডিইউ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

0Shares