অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। আর তা যদি হয় ইউরোপে তাহলে তো কোনো কথাই নেই! তাই আজকের এই নিবন্ধে আমি জানানোর চেষ্টা করবো একজন বাংলাদেশি হিসেবে আপনি কীভাবে ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়ায় পড়াশোনা করতে আসতে পারবেন।
আয়তন এবং ভৌগোলিক অবস্থান
স্লোভেনিয়া মধ্য ইউরোপে অবস্থিত ৭৮২৭.৪ বর্গমাইলের ছোটো একটি রাষ্ট্র। দেশটির আয়তন যেমন খুব বেশি বড় নয় ঠিক তেমনি দেশটিতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। প্রায় একুশ লাখের মতো জনসংখ্যাবিশিষ্ট মধ্য ইউরোপের এ দেশটির উত্তরে রয়েছে অস্ট্রিয়া, পশ্চিমে ইতালি, উত্তর-পূর্বে হাঙ্গেরি এবং দক্ষিণ-পূর্বে ক্রোয়েশিয়া। আর দক্ষিণ-পশ্চিম আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূল দ্বারা বেষ্টিত।
ইউরোপের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল যথা আল্পস পর্বতমালা, কার্পেথিয়ান বেসিন, ভূ-মধ্যসাগর এবং ডিনারেইডসের মিলন ঘটেছে এ স্লোভেনিয়াতে এসে। লুবলিয়ানা দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। স্লোভেনিয়া এক সময় লিবারেল কমিউনিজমের ভিত্তিভূমি হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিলো। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন সর্বপ্রথম কোনও রাষ্ট্র হিসেবে স্লোভেনিয়া যুগোস্লাভিয়ার জোট থেকে বের হয়ে আসে এবং নিজেদেরকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়া সে সময় স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতার এ দাবিকে অস্বীকার জানায়। শুরু হয় যুদ্ধের যা দশদিনব্যাপী স্থায়ী হয়েছিলও, এজন্য ইতিহাসে স্লোভেনিয়ার এ স্বাধীনতা যুদ্ধকে দশ দিনের যুদ্ধ নামেও অভিহিত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ছিলো ইউরোপ মহাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনও সংগঠিত যুদ্ধ যেখানে ৭৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিলো। তাই স্লোভেনিয়াকে অপেক্ষাকৃতভাবে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিলেও ভুল হবে না তবে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে থাকে।
ইইউতে প্রবেশ
২০০৪ সালে স্লোভেনিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে এবং ২০০৭ সালে টোলারের বদলে ইউরো দেশটির জাতীয় মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এক সময় কমিউনিজম শাসনের প্রচলন ছিলো এমন রাষ্ট্রের মধ্যে স্লোভেনিয়াই সর্বপ্রথম ইউরোর ব্যবহার শুরু করে। বিভিন্ন ধরণের সুউচ্চ পর্বতমালা বিশেষ করে আল্পস পর্বতমালা ও বিভিন্ন হৃদ ও স্কি-রিসোর্টের জন্য স্লোভেনিয়া পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল।
শিক্ষাক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া
যদিও দেশটি বলতে গেলে নতুন একটি রাষ্ট্র তবুও শিক্ষাক্ষেত্রে দেশটির অগগ্রতি চোখে পড়ার মতো। স্লোভিন দেশটির মানুষের প্রধান ভাষা হলেও দেশটির সর্বত্র প্রায় সবাই ইংরেজি বলতে পারেন। ইফ ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি ইনডেক্স অনুযায়ী স্লোভেনিয়ার স্কোর ৬৪.৪৮ যা সারা পৃথিবীর মধ্যে নবম এবং এক সময় কমিউনিজম শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ছিলো এমন দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়ার পরপরই স্লোভেনিয়ার অবস্থান।
নামকরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা, ইউনিভার্সিটি অব মারিবোর, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, ইউনিভার্সিটি অব প্রিমরস্কা দেশটির উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা এবং ইউনিভার্সিটি অব মারিবোর আন্তর্জাতিক যে কোনও সূচকে সারা পৃথিবীর প্রথম পাঁচশোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্থান পেয়েছে।
ইংরেজিতে পড়াশোনা
আমাদের দেশ থেকে যখন কেউ বাহিরের কোনও দেশে আসার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রথমে তাঁর মাথায় যে জিনিসটি কাজ করে সেটি হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার এবং এ ক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া অনেকটাই নমনীয়, দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি সকল ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিগ্রি প্রোগ্রাম পাওয়া যায় ইংরেজিতে এবং এখনও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় স্লোভেনিয়াতে অনেক কম খরচে পড়াশুনা করা যায়।